Monday, June 30, 2014

ঘর হয়ে উঠুক প্রশান্তিময়



পরিবারের যে মানুষগুলো সারা জীবন আমাদের দিয়ে যান স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার ছায়া, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই মানুষগুলো শুধু চান একটু প্রশান্তিময় আশ্রয়। বৃদ্ধ বয়সে যখন কমে আসে মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতা, তখন নিজ ঘরটিই যেন হয়ে ওঠে একমাত্র শান্তির স্থান। সাধারণত পরিবারের বয়োবৃদ্ধ (৬০ বা তদূর্ধ্ব) মানুষগুলো ঘরেই দিনের অনেকটা সময় কাটান। তাই তাঁদের ঘরটি যাতে আরামদায়ক হয়, সেই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে করতে হবে অন্দরসজ্জা; জানালেন ‘অন্দরসজ্জা’র ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রুমানা আফজাল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের ঘরে বেশি আসবাব না রাখাই ভালো। এতে ঘরে তাঁদের চলাফেরার সুবিধা হয়। ঘরে আসবাব স্থাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আরামদায়ক এবং স্বচ্ছন্দে ব্যবহারের উপযোগী হয়।’ সে ক্ষেত্রে ঘরের এক দিকের দেয়ালজুড়ে বানাতে পারেন কেবিনেট আলমারি। ঘরে বড় কেবিনেট আলমারি থাকলে সেখানেই তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখতে পারবেন। জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা আসবাবের প্রয়োজন হবে না।
একইভাবে খাটটি জানালার সামনে রাখতে পারেন। কারণ বৃদ্ধ বয়সে মানুষ বেশির ভাগ সময়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই বিছানার কাছে খোলা জানালা থাকলে তা কিছুটা হলেও শান্তি দেবে তাঁদের।
এ বয়সে অবসর কাটানোর জন্য অনেকেই প্রিয় সঙ্গী করে নেন বইকে। এ জন্য ঘরে রাখতে পারেন বইয়ের তাক-কাম টেবিল। এ ধরনের অন্দরসজ্জায় আসবাবের নকশাটা হয় সাদামাটা এবং দেয়ালের রং, সিলিং, পর্দা, বিছানার চাদরে তাঁদের বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয় সাদা বা চাপা-সাদা রঙের ব্যবহার। এ দুটি রং শুধু চোখের নয়, মনেরও প্রশান্তি আনে। শুধু প্রয়োজনীয় আসবাবই নয়; শৌখিন কিছু জিনিসও রাখতে পারেন ঘরে। এ প্রসঙ্গে রুমানা আফজাল খান বলেন, ‘এ বয়সী মানুষেরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই তাঁদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে উজ্জ্বল রঙের মাটির পটারি, কুশন, আয়না, গাছ ও বিভিন্ন ধরনের শোপিস সাজিয়ে রাখতে পারেন দেয়ালের সামনে। বিছানার কোনায় রাখতে পারেন স্ট্যান্ডিং ল্যাম্পশেড।’
আরাম কেদারা (রকিং চেয়ার) যেন হয়ে ওঠে এ বয়সী মানুষদের ঘরের শৌখিন এবং প্রয়োজনীয় আসবাব। রকিং চেয়ারে বসে বই পড়তে পড়তে বা চা খেতে খেতে কেটে যাবে তাঁদের অবসরের মুহূর্তগুলো। তা ছাড়া রকিং চেয়ারের পাশে রাখুন ছোট সাইড টেবিল বা টি-টেবিল। ঘরের দেয়ালজুড়ে ঝুলিয়ে দিন বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোলা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি।

কোথায় রাখবেন ফ্লোরবেড



ফ্লোরবেডের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য তখনই সম্ভব, যখন স্থানটি হবে একেবারে ঠিকঠাক। ঘরের ভেতর ফ্লোরবেড যেন খাপছাড়া মনে না হয়, সে জন্য রাখতে হবে জায়গা বুঝে। এ ব্যাপারে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাবিহা আখতার ইমু জানান, যেকোনো জায়গাই ফ্লোরবেডের জন্য উপযুক্ত নয়। বসার ঘরের যে দেয়ালে জানালা নেই সেই দেয়ালটি বেছে নিন। উল্টো দিকে জানালা থাকলে বিছানায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসবে। শোবার ঘর যদি ছোট হয়, সে ক্ষেত্রে আরামদায়ক একটি কর্নার বেছে নিতে পারেন। আর ঘর বড় হলে দেয়াল ঘেঁষে ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় ভালো মানাবে ফ্লোরবেড। তবে এ ক্ষেত্রে মাথার কাছে জানালা না থাকা ভালো।
সাজসজ্জা
স্থান নির্বাচন করার পর বেডটি সুন্দর করে সাজানোর পালা। সাজানোর ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাবিহা আখতার ইমু। তিনি বলেন, বসার ঘরে যে দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরবেড রাখবেন তা যদি উজ্জ্বল রঙের হয়, তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। বেড সাজাতে বিছাতে পারেন রঙিন চাদর, সঙ্গে রংবেরঙের কিছু কুশন। বসার ঘরের ক্ষেত্রে বালিশের প্রয়োজন নেই, কুশনই যথেষ্ট; তবে শোবার ঘরে দুটি বালিশ রাখতে পারেন। বিছানার চাদরের জন্য নিতে পারেন ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, অ্যাপলিক, লেইস বসানো বা হাতের কাজ করা চাদর। তা ছাড়া আদিবাসীদের পোশাকের ঢঙে বানানো চাদরও আজকাল খুব ফ্যাশনেবল। সঙ্গের কুশনগুলোর রং হিসেবে বেছে নিন চাদরের বিপরীত কালার, যেন তা চাদরের ওপর ফুটে ওঠে। কুশন কাভার ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের। খুব সাধারণভাবে সাজাতে চাইলে ব্লক বা স্ক্রিনপ্রিন্টের কাভার ব্যবহার করতে পারেন। আর একটু বৈচিত্র্যময় করার জন্য রাখতে পারেন কুসি-কাঁটার কুশন, কাতান কাপড়ের কুশন, অ্যাপলিকের কুশন, লেইস পুঁতি বসানো কুশন, ডলার বসানো কুশন কিংবা হাতের কাজ করা কুশন। এ ছাড়া বাজারে পাবেন ফাইবারের কুশন, উলের কুশন, সবজি বা ফলের আকৃতির কুশন, যেমন মরিচ, কলা, টমেটো, আনারস ইত্যাদি। বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে এগুলোও দু-একটি রাখতে পারেন ফ্লোরবেডে। তা ছাড়া দু-একটি ছোট সাইজের কোলবালিশও রাখতে পারেন। ফ্লোরবেডটি সুন্দর দেখাতে শুধু বেড সাজালেই হবে না, বেডের চারপাশের সাজটাও মাথায় রাখতে হবে। তাই বেডের সামনে রাখতে পারেন একটি সুন্দর শতরঞ্জি। পাশে ছোট্ট একটি টেবিলে রাখতে পারেন টেবিল ল্যাম্প। ছোট কোনো গাছও রাখতে পারেন প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চাইলে।
দরদাম
কুশন ও ছোট কোলবালিশ পাবেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। বালিশের কাভারসহ চাদর পাবেন ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। কুশন কাভার ১৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে
পাবেন।
ফ্লোরবেডের আনুষঙ্গিক সব জিনিস পাবেন গাউছিয়া, নিউ মার্কেটে। একটু ফ্যাশনেবল কিছু পেতে চাইলে যেতে পারেন আড়ং বা যাত্রায়।
টিপস
* ফ্লোরবেডের জন্য জাজিমের তুলনায় ম্যাট্রেসই বেশি আরামদায়ক।
* অতিরিক্ত কুশন ভালো দেখাবে না, তাই বেডের আকার বুঝে কুশন রাখুন।
* কুশন ও চাদরের রং যেন একই কিংবা কাছাকাছি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
* শোবার ঘরে যেহেতু বালিশ থাকছে, তাই কুশন রাখুন ছোট সাইজের। আর বসার ঘরে যেহেতু বালিশ থাকছে না, সেহেতু কুশন রাখুন একটু বড় সাইজের।

খাবার টেবিলের সাজসজ্জা



প্রথমেই আপনার টেবিলের ধরন অনুযায়ী টেবিল ক্লথ বেছে নিন। অবশ্য ইদানিং অনেক পরিবারের গ্লাস-ফ্রেম ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে টেবিল ক্লথের ঝামেলা অনেকটাই এড়ানো যায়। ক্ষেত্রে শুধু লম্বা বা কোণাকৃতির ম্যাট বসিয়ে নিতে পারেন। এসব ম্যাটে আরেকটা সুবিধাও আছে।
এতে খাবারের বাড়তি তাপটুকু শুষে নেয়। যাদের খাবারের টেবিল কাঠের তাদের ক্ষেত্রে টেবিলটা ভালভাবে বার্নিশ করে নিলেই ভাল হয়। এবার ঘরের দেওয়ালের রঙ আর আসবাবের রঙের দিকে খেয়াল রেখে টেবিল ক্লথ বেছে নিন। অবশ্য যারা নতুন করে টেবিল ক্লথ কিনতে চান না তারা পুরনো কাপড়ে পাড় লাগিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে টেবিল ক্লথের কিনার ঘেষে লেইস লাগিয়ে নিতে পারেন, যা ক্লথে অন্যরকম একটা লুক আনবে। তবে এক্ষেত্রে যা কাজ করার টেবিল ক্লথের কিনার ঘেষেই করুন। কেননা মাঝখানে যেহেতু খাবার রাখা হবে তাই সেখানে কারুকাজ করলে তা না দেখার সম্ভাবনাই বেশি হবে। টেবিল ক্লথে থাকতে পারে এপলিকের কারুকাজ, ব্লক বা টাইডাইও থাকতে পারে। তবে রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় রঙটাকেই একটু বেশি প্রাধাণ্য দেন। কেননা যেহেতু খাবার দাবারের ব্যাপার তাই ঝোল তরকারি একটু আধটু পড়তেই পারে।

কি দিয়ে সাজাবেন টেবিল?
কাঁচের টেবিলের ক্ষেত্রে টেবিলের নিচে শতরঞ্জি পেতে দিলে ভাল হয়। চেয়ার প্রতি একটি করে প্লেট ম্যাট বিছিয়ে দিন। আজকাল তালের আঁশ, বাঁশ, মাদুর চিক, পাটের কুরুশের কাজের টেবিলের ম্যাট পাওয়া যাচ্ছে অহরহ। এছাড়াও সুতি কাপড়ের ওপর এপলিকের, নকশিকাঁথা ফোঁড়, ব্লক, টাইডাই ইত্যাদি কাজের ম্যাটও আছে। বাঁশের ম্যাটারিয়ালে তৈরি লম্বা রানার বিছিয়ে দিতে পারেন টেবিলে। হতে পারে এগুলো গোলাকার, ওভাল বা চৌকোণাকৃতির। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটে টেবিল ম্যাট, রানার, টেবিল ক্লথ, টিকোজি, টিস্যু বক্স কাভার ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। চেয়ারে কভার ক্লথ দিতে পারেন। আর যদি একটু নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে চান তবে হাল ফ্যাশনের বিভিন্ন ধরনের কুশন রাখতে পারেন চেয়ারে। পুরনো শাড়ি কেটেই করতে পারেন কুশন কভার।
টেবিলের সৌন্দর্যটেবিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মাঝখানে খাটো ডাঁটার ফুল রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে গোলাপ, কাঠগোলাপ বা যেকোন মৌসুমী ফুল থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়। এছাড়া আজকাল বিভিন্ন সুগন্ধি মোমবাতি পাওয়া যায় বাজারে। ইচ্ছে হলে এগুলো দিয়েও সাজাতে পারেন টেবিল।
টেবিলের চারপাশের সাজ
টেবিলে আলো যাতে ঠিকভাবে পড়ে সেজন্য বেছে নিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ঝুলন্ত ল্যাম্পশেড। এক্ষেত্রে কাগজ, কাপড়, বাঁশ, মাটি, চীনামাটি, কাঠ ইত্যাদি ম্যাটারিয়ালের ল্যাম্প শেডের বৈচিত্র্যময় কালেকশন থেকে বেছে নিন আপনার পছন্দের ল্যাম্পশেড। খাবার ঘরের যে কোন প্রান্তে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখতে পারেন কয়েকটি গাছের টব। আর পর্দার রঙ যদি জ্বলে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে তাতে একটু ব্লকের ছোঁয়া দিয়ে নিন। এছাড়া বাঁশ বা বেতের চিকও লাগাতে পারেন। জানালের এক চিলতে জায়গায় ইচ্ছে করলে রাখতে পারেন ইনডোর প্ল্যান্ট। এবারে দেয়ালে একটু অন্যরকম পরিবেশ আনতে ঝুলিয়ে দিন কোন পেইন্টিং বা নকশি কাঁথা। ব্যস, সাজানো হয়ে গেল আপনার খাবার টেবিলসহ খাবার ঘর।

মনমতো মানানসই টেবিল



কাঠ ছাড়াও বেত, বাঁশ, রট আয়রন আর গাছের গুঁড়ির টেবিল পাওয়া যায়। গোলাকার ও আয়তাকারের পাশাপাশি ডিম্বাকার, ষড়ভুজাকৃতির খাবার টেবিলও পাওয়া যাচ্ছে। ছোট ঘরে কম উচ্চতার খাবার টেবিল থাকলে ঘর বড় দেখায়। সেই সঙ্গে চেয়ারের উচ্চতাও সংগতিপূর্ণ হতে হবে। আর ছোট জায়গার জন্য গোলাকার টেবিল আদর্শ। আর বড় জায়গায় ডিম্বাকার, আয়তকার, ষড়ভুজাকৃতি মানে যে কোনো রকমই বেছে নিতে পারেন। ঘরের আয়তন ও পরিবারের সদস্য সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে খাবার টেবিল নির্বাচন করুন। টেবিল নির্বাচনের আগে খাবার ঘরের মোটিফ নিয়ে ভাবুন। বাঙালিয়ানায় ঘর সাজাতে বেত বা বাঁশের টেবিল নিন, আর মডার্ন সাজে রট আয়রন বা নকশাদার কাঠের টেবিল নিতে পারেন। গ্লাসটপ দেওয়া কাঠের গুঁড়ির টেবিল সব সাজের সঙ্গেই মানায়।
টেবিল কভার
টেবিল কভার কাপড়, প্লাস্টিক ও রাবারের হয়ে থাকে। টেবিল কভারগুলো পিস ও গজ হিসেবে বিক্রি হয়। বিভিন্ন রঙের কভারে ফুল, ফল ও ছাপা নকশা পাওয়া যায়। চাইলে নিতে পারেন একরঙা টেবিল কভার। টেবিলের ধরন অনুযায়ী টেবিল কভার পাবেন। টেবিল কভারের সঙ্গে রানার বা ম্যাট হবে বিপরীত। অর্থাৎ টেবিল কভার প্রিন্টেড হলে রানার ও ম্যাট হবে একরঙা। আর একরঙা কভারের মঙ্গে কালারফুল রানার ও ম্যাট নিন।
টেবিল ম্যাট
বিভিন্ন ধরনের টেবিল ম্যাট পাওয়া যাচ্ছে। যেমন বাঁশ, রাবার, ফাইবার, প্লাস্টিক, কাপড় ও পাটের। ছোট, মাঝারি ও বড়র সঙ্গে গোল, চারকোনা, ত্রিকোনা ও ডিম্বাকার হয়। ম্যাটগুলো সাধারণত সেট হিসেবে বিক্রি হয়। বাঁশের তৈরি বিভিন্ন রঙের টেবিল ম্যাটের চাহিদাই বেশি। দেশীয় আমেজ চাইলে ব্যবহার করুন শীতল পাটি বা নকশিকাঁথার ম্যাট। এ ছাড়া ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারি করা টেবিল ম্যাটও পাবেন। রানারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ম্যাট ব্যবহার করুন। রানার দেশীয় উপকরণের হলে ম্যাটও হবে দেশীয় আমেজের।
রানার
রানার দিয়ে টেবিলের বাড়তি সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন। কাপড়, পাট ও রাবারের রানার বিভিন্ন সাইজের রয়েছে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের নানান নকশার রানার হয়। ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারি করা রানার সব টেবিলের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। টেবিল রানার সাধারণত লম্বা হয়। লম্বা আকৃতির বা ডিম্বাকার টেবিলেই বেশি মানানসই। দুই পাশে ঝুলিয়ে দিলে ভালো দেখাবে। গোল বা চতুর্ভুজাকৃতির টেবিলে চারকোনা টেবিল রানার ব্যবহার করুন।
টেবিলের সাজগোজ
আধুনিক খাবার টেবিলে সিরামিকের পাত্র আর ট্র্যাডিশনাল সাজে মাটির প্লেট-গ্লাস ও পাত্র ব্যবহার করুন। খাবার ঘরের অন্য আসবাব ও সাজ খাবার টেবিলের মোটিফেই হওয়া উচিত। পর্দা ও দেয়াল শোপিস মোটিফ অনুযায়ী বেছে নিন। আকার বুঝে টেবিল সাজান। অনেক গৃহসজ্জা সামগ্রী একত্রে রাখবেন না। ছোট টেবিল হলে মাঝখানে একটা ফুলদানি বা রঙিন মোমবাতি স্ট্যান্ড বা একটা চামচ স্ট্যান্ড রাখুন।
একটা ফলের ঝুড়ি রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে টেবিলের আকার খেয়াল রাখুন। টেবিল আয়তকার হলে মোমদানি, ফলের ঝুড়ি আর চামচস্ট্যান্ড সারি করে সাজান। ডিম্বাকার টেবিলে গুচ্ছ করে সাজাতে পারেন। ফুল গৃহসজ্জার সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফুলদানিতে একগুচ্ছ তাজা ফুল রাখুন। সম্ভব না হলে কৃত্রিম ফুলও ব্যবহার করতে পারেন। বড় টেবিলে ফুলদানির পরিবর্তে ইকেবানা বেছে নিন।

Sunday, June 29, 2014

বসার ঘরের সাজসজ্জা



ঘরের কিছু কিছু জায়গা থাকে, যা সবাই ব্যবহার করেন। যেমন - বসার ঘর (লিভিং রুম) ও করিডর (প্যাসেজ)। বসার ঘরের সাজসজ্জা প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই সাজানো উচিত। কিভাবে সাজাবেন লিভিং রুম আর করিডর, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী।
আড্ডার ঘর
হড্রয়িং রুম ছাড়াও প্রায় সব ফ্ল্যাটেই এখন লিভিং রুম থাকে। এখানে পরিবারের সবাই অবসরে টিভি দেখে, বই পড়ে, গান শুনে বা বিশ্রামের জন্য কিছুটা সময় কাটায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লিভিং রুমের জায়গাটি থাকে খোলা, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো দরজা থাকে না। লিভিংয়ের সাজনির্ভর করে ঘরের কোন অংশে এর অবস্থান তার ওপর।
হলিভিং স্পেস মাঝখানে হলে দুই পাশে কম উচ্চতার সোফা এবং এক কোণে টিভি রাখুন। চাইলে কার্পেট, শতরঞ্জি বা শীতলপাটি দিয়ে ফ্লোরিংও করতে পারেন। এর ওপর ছোট-বড় কয়েকটি রঙিন কুশন দিন। সঙ্গে রাখুন কিছু ইনডোর প্লান্ট।
হলিভিং কর্নারে হলে একপাশে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ডিনার ওয়াগন, ওভেন ইত্যাদি রাখুন। এগুলো সবারই প্রয়োজন। আর একপাশে ইচ্ছামতো বসার ব্যবস্থা করে টিভি রাখুন। লো হাইট সোফা বা ফ্লোরিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি মোড়া বা টুলও রাখতে পারেন।
হলিভিং রুম একটু বড় হলে দেয়ালজুড়ে একটা বইয়ের তাক বানাতে পারেন। টিভি দেখার পাশাপাশি অবসরে বই পড়ার চমৎকার জায়গা হতে পারে লিভিং রুমটি।
হঘরে শিশু থাকলে লিভিংয়ের একটি কর্নার সাজাতে পারেন তার জন্য। ছোট আকারে তৈরি করুন একটি খেলাঘর, সেখানে রাখুন পুতুল, গাড়ি, ছোট একটি টেবিল, ছবি আকার সরঞ্জাম ইত্যাদি।
হলিভিংয়ের সাজে দেয়ালও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ জায়গাটি শুধুই পরিবারের সদস্যদের। তাই দেয়ালে সাজাতে পারেন পারিবারিক ছবি। দেয়াল বড় হলে ৬ ইঞ্চি ূ ৩ ইঞ্চি ফ্রেমে সাদাকালো থেকে রঙিন ছবি কোলাস করে সাজাতে পারেন। পারিবারিক ছবি রাখতে না চাইলে ৫ ইঞ্চি ূ ২.৫ ইঞ্চি মাপের কোনো পেইন্টিং, সিনারি বা ফ্লোরাল ফ্রেম দিয়ে সাজান।
হবাচ্চাদের কর্নারের দেয়ালটি সাজাতে পারেন বিভিন্ন কার্টুন চরিত্র_মিকি মাউস, সিনড্রেলা, ডোরেমন এবং অ্যানিমেশন ছবি দিয়ে।
হবইয়ের র‌্যাক বানানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে দেয়ালে তাক দিয়েও ছোট আকারে বই রাখতে পারেন। একইভাবে শোপিস র‌্যাকও বানাতে পারেন দেয়ালে।

করিডর
হএখানকার ফ্ল্যাটের প্যাসেজের আয়তন সাধারণ তিন থেকে চার ফুট হয়। প্যাসেজের সাজও নির্ভর করে প্যাসেজের অবস্থানের ওপর।
হমূল দরজার প্রবেশ পথে প্যাসেজ হলে দেয়ালে পারিবারিক ছবি না রাখাই ভালো। বরং দেয়ালে সাজান আয়না বা দেশ-বিদেশের বাঁধাই করা বড় ছবি।
হপ্যাসেজ কিছুটা বড় হলে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে রাউন্ড বা ওভাল শেপের ডেকোরেটিভ টেবিল রাখতে পারেন। আর দেয়ালে নকশাদার ফ্রেমে একটি ভালো শেপের আয়না। ডেকোরেটিভ টেবিলের ওপরে রাখুন শোপিস, কৃত্রিম ফুলের ঝাড়। টিস্যু বঙ্ আর সঙ্গে কিছু সুগন্ধি মোমবাতি।
হপ্যাসেজে জুতার র‌্যাক বানাতে চাইলে দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে শু র‌্যাক বঙ্ আকারে তৈরি করে নিন। ডেকোরেটিভ টেবিলের মতোই শু র‌্যাকের ওপরে কিছু ডেকোরেটিভ আইটেম রাখুন।
হএকটু ভিন্ন আমেজে প্যাসেজ সাজাতে চাইলে দেয়ালে মাঝ বরাবর এক ফুট জায়গা মার্বেল পাথর, টেরাকোটা বা স্টোন দিয়ে ডিজাইন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দেয়ালে অন্য কোনো সাজের প্রয়োজন নেই।
দেয়ালের নিচে সারি বেঁধে কয়েকটি ইনডোর প্লান্ট রাখুন।
হকরিডর ফ্ল্যাটের ভেতরের অংশে হলে দেয়ালে পারিবারিক বিভিন্ন ছবি দিয়ে সাজাতে পারেন অথবা দেয়ালের ওপরের অংশ ৪ ইঞ্চি ূ ৬ ইঞ্চি আকারের তাক বানিয়ে তাতে বিভিন্ন শোপিস এবং ডেকোরেটিভ আইটেম রাখতে পারেন।
হসম্ভব হলে প্যাসেজের ফলস সিলিং দিয়ে রঙিন আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে প্যাসেজের সাজটা আরো মায়াবী হয়ে উঠবে।

বসার ঘরের অন্দরসাজ ১



অন্দরসাজ মানেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনার অথবা বইপত্র ঘেঁটে নতুন ডিজাইনের হদিস খুঁজে বের করা। বৈঠকখানা, লিভিং রুম, ড্রইংরুম কিংবা বসার ঘর যে নামই ব্যবহার করি না কেন, জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য আদর্শ এই ঘর। বসার ঘরের অন্দরসাজ কেমন হবে তা নির্ভর করবে আমাদের ফ্ল্যাটের আয়তন, লাইফস্টাইল এবং বাজেটের ওপর। 
মনে রাখবেন, বসার ঘরের অন্দরসাজ আমাদের রুচির প্রথম বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু বসার ঘর বাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সফিস্টিকেশনের সঙ্গে সঙ্গে কমফোর্টের বিষয়টা অত্যন্ত জরুরি।
আপনি যদি নতুন বাড়ি বানান কিংবা কেনেন, তাহলে চেষ্টা করুন যাতে আপনার বাড়ির ড্রইং, ডাইনিং রুম দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হয়। এতে শীতের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদ আসার ফলে ঘর গরম থাকবে এবং গরমের সময় বিকেল থেকে সন্ধ্যার দিকে ঘরে ঢুকবে দক্ষিণের খোলা হাওয়া, যা খুবই আরামদায়ক।
বড় ঘর হলে ফর্মাল সোফা, সেন্টার টেবিল, কর্নার, ল্যাম্প, ঝাড়বাতি, কার্পেট দিয়ে ঘরকে সাজাতে পারেন। চাইলে দুই ধরনের বসার আয়োজনও করতে পারেন। আর ঘর যদি ছোট হয় সে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী সাজানোর প্যাটার্ন এবং আসবাবপত্র নির্বাচন করা প্রয়োজন।
বসার ঘরকে বড় দেখানোর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ড্রইং-ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা একসঙ্গে করা হয়। ডাইনিং ও ড্রইং স্পেস আলাদা করার জন্য দুটি জায়গার মাঝখানে নানা রকমের পার্টিশন, বুক শেলফ বা ক্যাবিনেট দিতে পারেন।
রঙের সঠিক ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারে ঘরের সৌন্দর্য। মনে রাখবেন উজ্জ্বল ও হালকা রং ঘর বড় দেখাতে সাহায্য করে। যদি ঘরে সূর্যের আলো কম ঢোকে তাহলে কোনোভাবেই দেয়ালে গাঢ় রং করাবেন না। ঘর আরো অন্ধকার দেখাবে। যদি গাঢ় রং করাতে চান তাহলে একটি দেয়ালে কমলা, লাল, হালকা নীল রং করে অন্য দেয়ালগুলোয় নিউট্রাল রং করান।
কনট্রাস্ট রঙের ব্যবহারে ঘরের স্যাঁতসেঁতে এবং মনমরা ভাব দূর হবে। কালারফুল এবং ব্রাইট মুড আনার জন্য কনট্রাস্ট রঙের কুশন কভার অথবা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। পর্দার ডিজাইন অনেকটাই নির্ভর করে জানালা-দরজার ডিজাইনের ওপর। ছোট ফ্ল্যাটে বেশি ভারী পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো। রিচ ফেব্রিকের পর্দা লাগালে ঘরে একটি আলাদা আমেজ আসে।
এখন মেঝে নিয়েও নানা রকমের এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। সেহেতু দেয়ালের রং, ফার্নিচার, পর্দা, সোফা কভারের মতো মেঝে বারবার বদলানো সম্ভব নয়। তাই আপনার পছন্দ অনুযায়ী মেঝে বেছে নিন। যদি ফার্নিচার হাইলাইট করতে চান, তাহলে নিউট্রাল মেঝে রাখাই ভালো।
আর মেঝেতে কার্পেট পাতলে ঘর অনেক বেশি এলিগেন্ট লাগে। বাজেট কম থাকলে শতরঞ্জি ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের কর্নারগুলোতে রাখতে পারেন ইনডোর প্লান্টস বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্পশেড ও ফুলদানি।
ঘরের ইন্টেরিয়র প্ল্যান করার আগে লাইটিংয়ের ব্যবস্থার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। আলো-ছায়ার ম্যাজিক তৈরি করতে চাইলে সাদা, লাল, কমলা, গোলাপি বিভিন্ন ধরনের লাইট ব্যবহার করুন। আর বিশেষ অংশ হাইলাইট করার জন্য স্পট লাইট লাগান।
Follow Us

About Us

Advertisment

Like Us

© ন ক শী All rights reserved | Theme Designed by basharnirjhor